উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের ইতিহাস থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতচর্চা সম্পর্কে আলোচনা
প্রশ্ন:- প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতচর্চা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর:- ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে জ্যোতিষ অন্যতম।বৈদিক যাগযজ্ঞের যথাযথ কাল নির্ধারণের জন্য জ্যোতিষের প্রয়োজন হয়।যাগযজ্ঞের জন্য অমাবস্যা-পূর্ণিমা, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান প্রভৃতির প্রয়োজনে জ্যোতিষ শাস্ত্রের উদ্ভব হয়। সুতরাং বলা যায়, ঋগবৈদিক কাল থেকেই ভারতবর্ষে জ্যোতিষ চর্চার সূত্রপাত।
সমগ্র জ্যোতিষশাস্ত্রকে মোট তিনভাগে ভাগ করা যায় জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত এবং ফলিত জ্যোতিষ।এক্ষেত্রে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, কক্ষপথ প্রভৃতি সম্পর্কিত আলোচনা জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল বিষয়।গণিত শাস্ত্রে আলোচিত হয়েছে সংখ্যাতত্ত্ব এবং বিভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতির সূত্রাবলী।অন্যদিকে ফলিত জ্যোতিষ হল গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে জাতকের সম্পর্ক ও তার শুভাশুভ প্রভাব সংক্রান্ত বিষয়ের আলোচনা।
তিনপ্রকার জ্যোতিষের মধ্যে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য।প্রাচীন ভারতে জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে যাঁরা চর্চা করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত, লল্পাচার্য প্রমুখ। আর্যভট্ট রচিত ‘আর্যভটতত্ত্ব’ এবং ‘আর্যমহাসিদ্ধান্ত’ জ্যোতি- বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ। ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে আর্যভটতন্ত্র প্রাচীনতম ও বিশিষ্ট গ্রন্থ।
সংখ্যা গণনার দ্বারা যে পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয় তাকে ‘গণিত’ বলে। গণিতের প্রধান দুটি শাখা- (১) সংখ্যা গণিত অর্থাৎ পাটীগণিত ও বীজগণিত এবং (২) আকৃতি গণিত অর্থাৎ জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতি।
পাটীগণিত: ‘পাটী’ শব্দের অর্থ যোগ, বিয়োগ নির্ণয় পদ্ধতি।আর্যভট্টের সময় থেকেই পাটীগণিত বিস্তার লাভ করে। আর্যভট্ট দশমিক পদ্ধতি ও শূন্যের প্রয়োগ করেছিলেন।
বীজগণিত: বীজগণিতের নানান তত্ত্ব বেদের শুনুসূত্রেই উপ্ত হয়েছে।ব্রহ্মগুপ্ত বীজগণিতের পরিবর্তে ‘কুটুক গণিত’ শব্দের ব্যবহার করেছেন।
জ্যামিতি: বেদের যুগে জ্যামিতির নাম ছিল ‘শুল্ক’। ভূমির পরিমাপের আলোচনা বিষয়ক গণিত জ্যামিতি নামে পরিচিত। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সরলরেখাকে সমানভাগে ভাগ করা, ত্রিভুজের সমান অন্য ত্রিভুজ অঙ্কন করা, সমকোণ অঙ্কন করা প্রভৃতি জ্যামিতির আলোচ্য বিষয়।
ত্রিকোণমিতি: আর্যভট্ট ত্রিকোণমিতির সূত্রপাত করেন।তিনি পাইয়ের মাননির্ণয় করেন। বরাহমিহিরও এব্যাপারে যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। তিনি আর্যভট্টের দেওয়া সারণীগুলির উন্নতি সাধন করেন ।
গণিতবিদ্যা বিষয়ক বহু গ্রন্থ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কয়েকটি আর্যভট্টের ‘আর্যভটীয়’, ব্রহ্মগুপ্তের ‘ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত’, মহাবীরের ‘গণিতসার সংগ্রহ’, শ্রীঘরের “ত্রিশতী”, শ্রীনিবাসের ‘গণিতচূড়ামণি’, নারাযণের ‘গণিতকৌমুদী’, দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের ‘সিদ্ধান্তশিরোমণি’ ও ‘লীলাবতী’ প্রভৃতি।