রামায়ণ ও মহাভারতের রচনা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আলোচনার মাধ্যমে রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য বিচার করা হল।
রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য আলোচনা
প্রশ্ন:- রামায়ণ ও মহাভারতের পৌর্বাপর্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ- রামায়ণ ও মহাভারত ভারতবর্ষ -এর জাতীয় মহাকাব্য। বিভিন্ন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পণ্ডিত এই দুই মহাকাব্যের রচনাকাল নির্ণয়ে প্রয়াসী হয়েছেন। ল্যাসেন, ওয়েবারও ইয়াকোবি প্রমুখ পণ্ডিতগণ রামায়ণকে মহাভারতের পূর্ববর্তী মনে করেন এবং ম্যাকডোনাল ভিন্টারনিৎস প্রমুখ পণ্ডিতগণ মহাভারতকে রামায়ণের আগে বলে যুক্তি দেখিয়েছেন।
যাঁরা রামায়ণকে প্রাচীন বলে মনে করেন, তাদের যুক্তিগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
- (১) রামায়ণের যুদ্ধকাণ্ডের একটি শ্লোক (৮১/২৮) মহাভারতে দ্রোণপর্বে হুবহু উদ্ধৃত হয়েছে।
- (২) মহাভারতে বাল্মীকির নাম পাওয়া যায়, কিন্তু রামায়ণে ব্যাসদেবের নাম নেই।
- (৩) রামায়ণের সূর্যবংশ আগে আর মহাভারতের চন্দ্রবংশ পরে।
- (৪) মহাভারতে রামোপাখ্যান আছে, কিন্তু রামায়ণে মহাভারতের কোনো কাহিনি বা চরিত্র বর্ণিত হয়নি।
- (৫) রামায়ণ বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের আগে এবং মহাভারত বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের পরে, তা ভাষার সাক্ষ্য বিচারে প্রমাণিত।
- (৬) মহাভারতে পাটলিপুত্রকে একটি মহানগররূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এই পাটলিপুত্রের সৃষ্টিকাল খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দ। রামায়ণে পাটলিপুত্রের উল্লেখ না থাকায় পাটলিপুত্রের আগে রামায়ণ রচিত হয়েছিল।
- (৭) বৈয়াকরণ পাণিনির কাল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক। রামায়ণে পাণিনির অনুশাসন মানা হয়নি, মহাভারতে হয়েছে।
- (৮) রামায়ণের মিথিলা ও বিশালা দুই পৃথক নগরী বুদ্ধের সময়ে একত্রে মিশে বৈশালী হওয়ায় রামায়ণে বৈশালীর উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অতএব রামায়ণ বুদ্ধের আগে রচিত। আর মহাভারত বুদ্ধের পরে।