কবি জয়দেব রচিত দশাবতারস্তোত্রম্ পদ্যাংশ অবলম্বনে দশ অবতারের কাহিনী অথবা দশাবতারস্তোত্রম্ পদ্যাংশ অবলম্বনে দশাবতারের কাহিনী বর্ণনা করা হল।
Table of Contents
দশাবতারস্তোত্রম্ পদ্যাংশ অবলম্বনে দশ অবতারের কাহিনী বর্ণনা
প্রশ্ন:- দশাবতারস্তোত্রম্ পদ্যাংশ অবলম্বনে দশ অবতারের কাহিনী বর্ণনা কর।
উত্তরঃ- বৈষ্ণব কবি জয়দেব রচিত ভক্তিমূলক গীতিকাব্য “গীতগোবিন্দম্ ”। এই কাব্যের মূল বিষয় রাধাকৃষ্ণের প্রণয়। কবি রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা বর্ণনা প্রসঙ্গে প্রথম সর্গের বিষ্ণুর দশাবতারের বর্ণনা করেছেন।
দশাবতারের বর্ণনা
পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে অনাচার বা পাপে পূর্ণ হলে, সেই পাপকে বিনাশ করতে ভগবান বিষ্ণু যুগে যুগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। একেই বলা হয় অবতার বিষ্ণুর দশ অবতারগুলি হল-
মৎস্য অবতারের বর্ণনা
ভগবান বিষ্ণু প্রলয়কালে সমস্ত সৃষ্টির বীজস্বরূপ বেদ কে রক্ষা করতে মৎস রুপ ধারণ করেন। মৎস্য অবতার হল ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার-
“প্রলয় পয়োধি জলে ধৃতবানসি বেদং।
বিহিত বহিত্র চরিত্রম্ অখেদম্।”
কূর্ম অবতারের বর্ণনা
ভগবান বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার কূর্ম বা কচ্ছপ। সমুদ্র মন্থন কালে পৃথিবী টলমল করতে থাকলে কচ্ছপ রূপ ধারণ করে ভগবান বিষ্ণু নিজের পৃষ্ঠে ধরণীকে স্থান দেন। সেই থেকে তার পিঠে চক্রের মত ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়-
“ধরণি ধারনকিণ চক্রগরিষ্ঠে”।
বরাহ বা শূকর অবতারের বর্ণনা
যখন পৃথিবী অতি পাপের ভার বহন করতে না পেরে পাতালে প্রবেশ করছিল।তখন শ্রী বিষ্ণুর বরাহ রূপ ধারণ করে দাঁতের অগ্রভাগে বিশাল পৃথিবী কে ধারণ করেন। দেখে মনে হয় যেন চন্দ্রের উপর কল্পিত কলঙ্ক রেখার মতো পৃথিবী শোভা পাচ্ছে-
“বসতি দশনশিখরে ধরনি তব লগ্না
শশিনি কলঙ্ককলেব নিমগ্না”।
নরসিংহ অবতারের বর্ণনা
এই অবতার শ্রীকৃষ্ণ অর্ধেক নর অর্ধেক সিংহ অর্থাৎ নৃসিংহ রূপ ধারন অত্যাচারী দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করে সনাতন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।-
“তবকরকমলবরে নখমঅদ্ভুতশৃঙ্গম্
দলিতহিরণ্যকশিপুতনুভৃঙ্গম”।
বামন অবতারের বর্ণনা
এই অবতারে ভগবান বিষ্ণু অতিক্ষুদ্র ত্রিপদ বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ। তিনি প্রচণ্ড প্রতাপশালী রাজা রাজাবলিকে ছলনায় পাতালে বন্দি করেন-
“ছলয়সি বিক্রমণে বলিমদ্ভূতবামন”।
পরশুরাম অবতারের বর্ণনা
যখন সারা পৃথিবী ক্ষত্রিয় দের অত্যাচারে অভিষ্ঠ তখন ভগবান বিষ্ণু কুঠার হাতে ধরাধামে অবতীর্ণ হলেন। তিনি পরশুরাম নাম নিয়ে পৃথিবী হতে একুশবার ক্ষত্রিয় অপসারণ করেন এবং তাদের রক্তে পৃথিবী কে প্রবর্তন করেন।
রাম অবতারের বর্ণনা
ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার হলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি অত্যাচারী লঙ্কার রাজা রাবণকে হত্যা করে দশটি মুণ্ডু উপহার রূপে অর্পণ করেন।-
“বিতরসি দিক্ষুরণে দিকপতি কমণীয়ম্
দশমুখমৌলিবলি রমনীয়ম্”।
বলরাম অবতারের বর্ণনা
এই অবতারে শ্রীকৃষ্ণ হলধর বা বলরাম রূপ ধারণ করে নাঙ্গল এর সাহায্যে বাঁধ নির্মান করে যমুনার জলপ্লাবন হতে মথুরার জলপ্রাবণ হতে মথুরা বাসীকে রক্ষা করেন।
বুদ্ধ অবতারের বর্ণনা
বৈদিক যুগের প্রধান কর্ম হল পশুবলি। এই পশু হত্যার অর্থাৎ বেদ ধর্মের নিন্দা করে অহিংসার বাণি প্রচার করতে শ্রীবিষ্ণু বুদ্ধ রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।
কল্কি অবতারের বর্ণনা
এই অবতার আবির্ভূত হয়ে কলি যুগের অবসান ঘটিয়েছেন বা ঘটাবেন। কল্কি অবতারে তরবারী হাতে অনাচারী ম্লেচ্ছদের নিধন করে পৃথিবীতে সত্যযুগের প্রতিষ্ঠা করবেন।
উপসংহারঃ পৃথিবী রক্ষার নিমিত্তে ভগবান বিষ্ণু বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন। তাই কবি জয়দেব স্তুতি করে বলেছেন-
“কেশব! ধৃতদশবিধরূপ
জয় জগদীশ হরে!”