একাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত নাট্যাংশ ভারতবিবেকম্ – ( শব্দার্থ ও বঙ্গানুবাদ )

একাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত নাট্যাংশ ভারতবিবেকম্ (higher Secondry Class – xi) পাঠ্যটির মূলপাঠ, শব্দার্থ ও বঙ্গানুবাদ নিচে দেওয়া হল।

Table of Contents

একাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত নাট্যাংশ ভারতবিবেকম্

নাট্যাংশ ভারতবিবেকম
রচয়িতাযতীন্দ্রবিমল চৌধুরী
কবি পরিচয়১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কাদুরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।
ভারতবিবেকম্

প্রথমদৃশ্যম্

(প্রথম দৃশ্য)

শ্রীরামকৃয়েন সহ শ্রীনরেন্দ্রস্য সাক্ষাৎকারঃ

(শ্রীরামকৃষ্ণের সহিত শ্রীনরেন্দ্রের সাক্ষাৎকার)

স্থানম্- কলিকাতা-সিমুলিয়াঞ্চলে শ্রীসুরেন্দ্রনাথমিত্রস্য গৃহম্।

(স্থান- কলিকাতার সিমুলিয়া অঞ্চলে শ্রীসুরেন্দ্রনাথ মিত্রের গৃহ)

সময়ঃ রাত্রেঃ সপ্তমঘটিকা (খ্রিস্টাব্দঃ ১৮৮১)

(সময়—রাত্রি সাতটা, খ্রিস্টাব্দ ১৮৮১)

শ্রীরামকৃষ্ণদেবঃ শ্রীসুরেন্দ্রনাথমিত্রঃ, ভক্তাশ্চ।

(শ্রীরামকৃষ্ণদেব, শ্রীসুরেন্দ্রনাথ মিত্র এবং ভক্তবৃন্দ)

ভারতবিবেকম্ (প্রথম অংশ)

মূলপাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

মাতঃ । মাতস্তুভ্যং নমঃ ।

জয়তি জয়তি যতি-জনগতি-জননী ভবতারিণী ।

নিয়ত-বিহিত-সুতশতহিত-বন্ধ-মোক্ষকারিণী ।।

গৃহ-শতশত-বিরচন-রত-কোটিদুঃখহারিণী ।

মমতাঘন-করুণানয়ন-তৃষিত-শান্তিকারিণী ।।

সদাহকারণকৃপাকারিণী ।

তনয়-তনয়-পুণ্য-বিনয়-ধন্যং মাং কুরু জননী !

মাত ! জগতঃ শতশতক্লেশাঃ মম হৃদয়ং বিদারয়ন্তি । ত্বং কৃপয়া সাধনশতং মাং বিজ্ঞাপিতবতী । কিন্তু কুত্র মমোত্তরসাধকাঃ ? উত্তরসাধকনিত্যদর্শনলালসা হৃদয়ং মম নিরম্ভরং ক্লিষ্মাতি । জগজ্জননি ! কুত্র মম শিবসমোত্তরসাধকো যদর্থমহং নিত্য মপেক্ষে ?

শ্লোকের অন্বয়ঃ-

যতি-জনগতিঃ, নিয়ত-বিহিত সুতশতহিতবন্ধমোক্ষকারিণী, গৃহ-শতশত বিরচনরত-কোটি দুঃখহারিণী, মমতাঘন-করুণানয়ন-তৃষিত-শান্তিকারিণী জননী ভরতারিণী জয়তি-জয়তি। সদা অকারণকৃপাকারিণী জননী তনয়-তনয়-পুণ্য-বিনয়-ধন্যং মাং কুরু।

শব্দার্থঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

মাতঃ (হে মা) মাতঃ (মাগো) তুভ্যম্ (তোমাকে) নমঃ (প্রণাম করি) । যতি-জনগতিঃ (যোগীগণের উদ্ধারকর্ত্রী) নিয়ত – বিহিত – সুতশতহিত – বন্ধ – মোক্ষকারিণী (সর্বদা শত শত সন্তানের মঙ্গলবিধানকারিণী এবং ভববন্ধন থেকে মুক্তিদায়িনী) গৃহ – শতশত – বিরচন – রত – কোটি – দুঃখহারিণী (শত শত গৃহাশ্রম রচনায় যারা ব্যাপৃত তাদেরও কোটি কোটি দুঃখনাশিনী) মমতাঘন – করুণানয়ন – তৃষিত – শান্তিকারিণী (মমতাঘন করুণাদৃষ্টির দ্বারা তাপিতদের শাস্তি প্রদায়িনী) জননী (মা) ভবতারিণী (ভবতারিণী) জয়তি জয়তি (জয়লাভ করুন) ।

সদা অকারণকৃপাকারিণী (সর্বদা অহৈতুকী কৃপাকারিণী) জননী (মা) তনয় – তনয়া – পুণ্য – বিনয় – ধন্যম্ (পুণ্যবান এবং বিনয়নম্র ভক্তসন্তানের দ্বারা ধন্য) মাম্ (আমাকে) কুরু (করো) । মাতঃ । (মা) জগতঃ (জগতের) শতশতক্লেশাঃ (শত শত দুঃখদুর্দশা) মম (আমার) হৃদয়ম (হৃদয়কে) বিদারয়ন্তি (বিদীর্ণ করে দিচ্ছে) । ত্বম্ (তুমি) কৃপয়া (কৃপা করে) মাম্ (আমাকে) সাধনশতম্ (শত শত সাধন মার্গ) বিজ্ঞাপিতবর্তী (নির্দেশ করেছো)। কিন্তু (কিন্তু) কুত্র (কোথায়) মম (আমার) উত্তরসাধকাঃ (উত্তরসাধকগণ) ? উত্তরসাধকনিত্যদর্শনলালসা (নিরন্তর উত্তর সাধকদর্শনের আকাঙ্ক্ষা) মম (আমার) হৃদয়ম্ (হৃদয়কে) নিরন্তরম্ (অন বরত) ক্লিশ্নাতি (কষ্ট দিচ্ছে)। জগজ্জননি ! (হে জগন্মাতঃ) কুত্র (কোথায়) মম (আমার) শিবসমঃ উত্তরসাধকঃ (শিবের তুল্য উত্তরসাধক) যদর্থম্ (যার জন্য) অহম্ (আমি) নিত্যম্ (প্রতিদিন) অপেক্ষে (অপেক্ষা করে আছি) ।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

মা, মাগো ! তোমাকে প্রণাম করি । যোগিগণের উদ্ধারকর্ত্রী, সর্বদা শত শত সন্তানের মঙ্গল বিধানকারিণী, ভববন্ধন থেকে মুক্তিদায়িনী, শত শত গৃহাশ্রম রচনায় যারা ব্যাপৃত সেইসব ঘোর সংসারীদেরও কোটি কোটি দুঃখনাশিনী, মমতাঘন, করুণা দৃষ্টির দ্বারা তাপিতদের শান্তিবিধায়িনী জননী ভবতারিণী জয়লাভ করুন। সর্বদা অহৈতুকী কৃপাকারিণী মা ! (তুমি) আমাকে পুণ্যবান এবং বিনয়নম্র ভক্তসন্তানের দ্বারা ধন্য করো ।

মা ! জগতের শত শত দুঃখ-কষ্ট আমার হৃদয়কে দীর্ণ – বিদীর্ণ করেছে । তুমি কৃপা করে আমাকে বহু সাধন মার্গ জানিয়েছ । কিন্তু আমার উত্তরসাধকরা কই? সর্বদা উত্তরসাধকের দর্শনাকাঙ্ক্ষা আমার হৃদয়কে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিচ্ছে । হে জগন্মাত ! আমার শিবের তুল্য উত্তরসাধক কোথায়, যার জন্য আমি সবসময় অপেক্ষা করে আছি ?

ভারতবিবেকম্ (দ্বিতীয় অংশ)

মূলপাঠঃ-

সুরেন্দ্রনাথঃ-

(স্বগতম) অহো । মধুরেয়ং সন্ধ্যা । পুনঃ গুরুদেবস্য অনির্বচনীয়ো মহিমা ! যত্রৈব এষ তিষ্ঠতি, তৎস্থানং ক্ষণাজ্জায়তে দেবমন্দিরসদৃশম্ । শরীরাদস্য নিরন্তরং প্রসরতি জ্যোতির্ধারা, বাক্যান্নির্গলতি নিরন্তর প্রবাহি-সুরধুনিধারের সুধা, হাস্যান্নিঃসরতি অরুণকিরণরাশিঃ।

শব্দার্থঃ-

সুরেন্দ্রনাথঃ-

স্বগতম্ (মনে মনে) অহো ! (আহা!) মধুরা (মধুর) ইয়ম্ (এই) সন্ধ্যা (সন্ধ্যা) ! পুনঃ (আবার) গুরুদেবস্য (গুরুদেবের) অনির্বচনীয়ঃ (যা বাক্যে প্রকাশ করা যায় না) মহিমা (মাহাত্ম্য)। যত্র এব (যেখানেই) এষঃ (ইনি) তিষ্ঠতি (থাকেন) তৎস্থানম্ (সেই স্থান) ক্ষণাৎ (সঙ্গে সঙ্গে, ক্ষণকালের মধ্যে) জায়তে (হয়ে ওঠে) দেবমন্দিরসদৃশম্ (দেবমন্দিরতুল্য)। শরীরাৎ (শরীর থেকে) অস্য (এঁর) নিরন্তরম্ (সর্বদা) প্রসরতি (নির্গত হয়) জোতির্ধারা (জ্যোতিধারা), বাক্যাৎ (বাক্য থেকে) নির্গলতি (ঝরে পড়ে) নিরন্তর-প্রবাহি-সুরধুনিধারা (সতত প্রবহমান মন্দাকিনীধারা) ইব (তুল্য) সুধা (অমৃত), হাস্যাৎ (হাসি থেকে) নিঃসরতি (বের হয়) অরুণকিরণরাশিঃ (সূর্যের কিরণমালা)।

বঙ্গানুবাদঃ-

সুরেন্দ্রনাথঃ-

(মনে মনে) আহা! মধুর এই সন্ধ্যা ! আর গুরুদেবেরও কী অনিবচনীয় মাহাত্ম্য ! ইনি যেখানেই থাকেন, সেই স্থান তৎক্ষণাৎ দেবমন্দিরতুল্য হয়ে ওঠে। এঁর শরীর থেকে সবসময় জ্যোতির্ধারা নির্গত হচ্ছে, বাক্য থেকে সর্বদা প্রবহমান মন্দাকিনী ধারার তুল্য অমৃত ঝরে পড়ছে, হাসি থেকে যেন সূর্যের কিরণমালা বিচ্ছুরিত হচ্ছে।

ভারতবিবেকম্ (তৃতীয় অংশ)

মূলপাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(সুরেন্দ্রমুদ্দিশ্য) সুরেন্দ্র। ভৃশং বাঞ্ছামি মাতৃকাস্তুতিং শ্রোতুম্। কশ্চন তরুণগায়কবরস্তব গৃহসকাশে বিদ্যতে বা ? তস্মৈ চেতো মমোৎকণ্ঠতে।

শব্দার্থঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(সুরেন্দ্রমুদ্দিশ্য) (সুরেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে) সুরেন্দ্র! (সুরেন্দ্র) ভৃশম্ (অত্যন্ত) বাঞ্ছামি (ইচ্ছা করি) মাতৃকাস্তুতিম্ (মাতৃনাম) শ্রোতুম্ (শুনতে) কঃ চন (কোনো) তরুণগায়কবরঃ (নিপুণ তরুণ গায়ক) তব (তোমার) গৃহসকাশে (গৃহের কাছে) বিদ্যতে বা ? (আছে কি?) তস্মৈ (তার জন্য) চেতঃ (চিত্ত) মম (আমার) উৎকণ্ঠতে (উৎকণ্ঠিত হচ্ছে)।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(সুরেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে) সুরেন্দ্র! মাতৃনাম শুনতে আমার অত্যন্ত ইচ্ছা হচ্ছে। তোমার ঘরের কাছাকাছি তেমন কোনো নিপুণ তরুণ গায়ক আছে কী? তার জন্যে আমার চিত্ত উৎকণ্ঠিত হচ্ছে।

ভারতবিবেকম্ (চতুর্থ অংশ)

মূলপাঠঃ-

সুরেন্দ্রঃ-

– দেব ! বিদ্যতে মম গৃহসকাশে নরেন্দ্রনাথ নামধেয়ঃ দত্তবংশোদ্ভবো যুবকঃ। সাম্প্রতং সুঃ বিদ্যার্জনরতঃ, ব্রাহ্মমন্দিরাদিকও গচ্ছতি। তরুণে বয়সি বর্তমানোঽপি অসৌ সত্যমেব সংগীতনিপুণঃ।

শব্দার্থঃ-

সুরেন্দ্রঃ-

দেব (প্রভু) ! বিদ্যতে (আছে) মম (আমার) গৃহসকাশে (গৃহের কাছে) নরেন্দ্রনাথনামধেয়ঃ (নরেন্দ্রনাথ নামে) দত্তবংশোদ্ভবঃ (দত্তবংশে জাত) যুবকঃ (যুবক) । সাম্প্ৰতম্ (এখন) সঃ (সে) বিদ্যার্জনরতঃ (বিদ্যালাভে নিযুক্ত), ব্রাত্মমন্দিরাদিকম্ চ (ব্রায়সমাজে প্রভৃতিতেও) গচ্ছতি (যাতায়াত করে) । তরুণে বয়সি (তারুণ্যে) বর্তমানঃ অপি (উপস্থিত হলেও) অসৌ (সে) সত্যম্ এর (সত্যই) সংগীতনিপুণঃ (সংগীতে পারদর্শী) ।

বঙ্গানুবাদঃ-

সুরেন্দ্রঃ-

প্রভু ! আমার বাড়ির কাছে দত্তবংশজাত নরেন্দ্রনাথ নামে এক যুবক আছে। এখন সে পাঠরত, ব্রাহ্মসমাজ প্রভৃতিতেও যাতায়াত করে। বয়সে তরুণ হলেও সে সত্যই সংগীতনিপুণ।

ভারতবিবেকম্ (পঞ্চম অংশ)

মূলপাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(হর্ষান্বিতঃ) কিং নাম ? নরেন্দ্র ইতি? – সত্যং সর্বনরশ্রেষ্ঠ এবাসাবিতি কথং মহ্যং প্রতিভাতি ? অথবাহকারণং বা স্নিহ্যত্যস্মিন্ মম মনঃ। অহো ! অপূর্বং বস্তু খলু মনো যদনাগতকারণং সূচয়তি।

(জননীং ভবতারিণীমুদ্দিশ্য বন্ধাঞ্জলিভৃত্বা) জননি ! অপ্যেষ নরেন্দ্রো বরণীয়তমো মম মানসপুত্রঃ স্যাৎ। মাতঃ কৃপাময়ি ! কদাপি ত্বং মৃষা ন নির্দিশসি। সত্বরং ব্রুহি, মাতঃ ! এষ নরেন্দ্র এব মম শ্রেষ্ঠ উত্তরসাধকঃ স্যাৎ ? (সুরেন্দ্রমুদ্দিশ্য) সুরেন্দ্র ! নরেন্দ্রনামধারিণে তরুণায় সন্দেশং মে প্রেষয়। তদ্দর্শনায়াহমাকুলো বর্তে।

শব্দার্থঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

কিম্‌ নাম (কী নাম?) নরেন্দ্রঃ ইতি (নরেন্দ্র?) সত্যম্ (সত্যই) সর্বনরশ্রেষ্ঠঃ (সকল মানুষের শ্রেষ্ঠ) এব (রূপে) অসৌ (সে) ইতি (এরূপ) কথম্ (কেন) মহাম্ (আমার) প্রতিভাতি (মনে হচ্ছে)? অথবা (অথবা) অকারণম্ (অকারণ) স্নিহাতি (স্নেহপরায়ণ হচ্ছে) অস্মিন্ (এর প্রতি) মম (আমার) মনঃ (মন)। অহো (আহা)! অপূর্বম্ (অপূর্ব) বস্তু (বস্তু) ) খলু (নিশ্চয়) মনঃ (মন)। যৎ (যে) অনাগতকারণম্ (অনা গত কারণকে) সূচয়তি (সূচিত করে)। জননীম্ ভবতারিণীম্ উদ্দিশ্য (জননী ভবতারিণীকে উদ্দেশ্য করে) জননী! (মাতঃ)এষঃ (এই) নরেন্দ্রঃ (নরেন্দ্র) অপি (কী) বরণীয়তমঃ (শ্রেষ্ঠ) মানসপুত্রঃ (মানসপুত্র) স্যাৎ (হবে)। মাতঃ (মা) কৃপা ময়ি (দয়াময়ী)! কদাপি (কখনও) ত্বম্ (তুমি) মৃষা (মিথ্যা) ন (না) নির্দিশিসি (নির্দেশ দাও)। সত্বরম্ (শীঘ্র) ব্রুহি (বল), মাতঃ (মা)! এষঃ (এই) নরেন্দ্রঃ (নরেন্দ্র) ইব (ই) মম (আ মার) শ্রেষ্ঠঃ (শ্রেষ্ঠ) উত্তরসাধক: (উত্তরসাধক) স্যাৎ (হবে)? সুরেন্দ্রম্ উদ্দিশ্য (সুরেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে) সুরেন্দ্র। (সুরেন্দ্র) নরেন্দ্র-নাম-ধারিণে (নরেন্দ্রনামধারী) তরুণায় (তরুণকে) সন্দেশম্ (বার্তা) মে (আমার) প্রেষয় (পাঠাও)। তৎ-শনায় (তাকে দেখার জন্য) অহম্ (আমি) আকুলঃ (আকুল হয়ে) বর্তে (অপেক্ষা করছি)।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(হর্ষোৎফুল্ল হয়ে) কী নাম ? নরেন্দ্র ? একে সত্যই সকল মানুষের শ্রেষ্ঠ বলে আমার মনে হচ্ছে কেন? অথবা এর প্রতি আমার মনের অকারণ স্নেহ জন্মেছে। আহা! মন এক অপূর্ব বস্তু যে অনাগত কারণকে সূচিত করে। (মা ভবতারিণীকে উদ্দেশ্য করে অঞ্জলিবদ্ধ করে) মা! বরণীয়দের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই নরেন্দ্র কি আমার মানসপুত্র ! হবে? মা ! কৃপাময়ি ! তুমি তো কখনও মিথ্যা নির্দেশ দাও না। শীঘ্র বলো, মা! এই নরেন্দ্রই কি আমার শ্রেষ্ঠ উত্তরসাধক হবে? (সুরেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে) সুরেন্দ্র ! নরেন্দ্র নামধারী তরুণকে আ মার বার্তা পাঠাও। তাকে দেখার জন্য আমি আকুল হয়ে আছি।

ভারতবিবেকম্ (ষষ্ঠ অংশ)

মূলপাঠঃ-

সুরেন্দ্রঃ-

(বিস্ময়মাপন্নঃ) নৈষ নরেন্দ্রো গুরুদেবপরিজ্ঞাতঃ। কিন্তু কথময়ং গুরুদেবো মে তস্মৈ ভূশমুৎকণ্ঠতে ? অথবা গহনা খলু মহতাং চিত্তবৃত্তিঃ। (শ্রীরামকৃষ্ণমুদ্দিশ্য) দেব! অহং যামি। ভবতা ক্ষণ মাস্যতাম্। অচিরেণ প্রত্যাবর্তিষ্যেঽহম্।

শব্দার্থঃ-

সুরেন্দ্রঃ-

বিস্ময়ম্ আপন্নঃ (বিস্মিত হয়ে) ন (নয়) এষঃ (এই) নরেন্দ্রঃ (নরেন্দ্রঃ) গুরুদেবপরিজ্ঞাতঃ (গুরুদেবের পরিচিত)। কিন্তু (কিন্তু) কথম্ (কীভাবে) অয়ম্ (ইনি) গুরুদেবঃ (গুরুদেব) মে (আমার) তস্মৈ (তার জন্য) ভৃশম্ (এত) উৎকণ্ঠতে (উৎকণ্ঠিত হচ্ছেন)? অথবা (অথবা) গহনা (রহস্যময়) খলু (নিশ্চয়) মহতাম্ (মহৎদের) চিত্তবৃত্তিঃ (মনোভাব)। শ্রীরামকৃষ্ণম্ উদ্দিশ্য (শ্রীরামকৃয়কে উদ্দেশ্য করে) দেব! (প্রভু) অহম্ (আমি) যামি (যাচ্ছি)। ভবতা (আপনার দ্বারা) ক্ষণম্ (ক্ষণকাল) আস্যতাম্ (বসা হোক)। অচিরেণ (অবিলম্বে) প্রত্যাবর্তিষ্যে (প্রত্যাবর্তন করব) অহম্ (আমি)।

বঙ্গানুবাদঃ-

সুরেন্দ্রঃ-

(বিস্মিত হয়ে) এই নরেন্দ্র গুরুদেবের পরিচিত নয়। কিন্তু তার জন্য গুরুদেবের এমন দারুণ উৎকণ্ঠা কেন? অথবা মহৎদের চিত্তবৃত্তি অবোধগম্য। (শ্রীরামকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে) প্রভু, আমি যাচ্ছি। আপনি ক্ষণকাল বসুন। আমি অবিলম্বে ফিরে আসব।

ভারতবিবেকম্ (সপ্তম অংশ)

মূলপাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

অহো ! তরুণ এব শিক্ষণীয়ঃ। কো –অহো মালহৃদয়ত্বাৎ সর্বমেব তস্য হৃদি ভবত্যঙ্কিতম্। কাঙ্ক্ষাম্যহং দ্রষ্টুং জটাজুটধারিণং সর্বভারবাহিনং সুরধুনিকলকলধারামলিনং শিবং বিশ্বস্য শঙ্করং মমোত্তরসাধকম্। (সুরেন্দ্রনাথো নরেন্দ্রণ সহ প্রত্যাবৃত্তঃ)

শব্দার্থঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

অহো! (আহা!) তরুণঃ এব (তরুণযুবকই তো) শিক্ষণীয়ঃ (শিক্ষা দেওয়ার যোগ্য)। কোমলহৃদয়ত্বাৎ (যেহেতু তার হৃদয় কোমল) সৰ্বম্ এব (সবকিছুই) তস্য (তার) হৃদি (হৃদয়ে) ভবতি অঙ্কিতম্ (গাঁথা হয়ে যায়)। কাঙ্ক্ষামি (আমি চাই) দ্ৰষ্টুম্ (দেখতে) জটাজুটধারিণম্ (জটাজুটধারী)সর্বভারবাহিনম্ (সকলভারবাহী) সুরধুনিকলকলধারা মলিনম্ (মন্দাকিনীর কলকল ধারাধারী) বিশ্বস্য (জগতের) শঙ্করম্ (মঙ্গলকারী) শিবম্ (শিবকে) মমোত্তরসাধকম্ (আমার উত্তরসাধকরূপে)। সুরেন্দ্রনাথঃ নরেন্দ্রণ সহ প্রত্যাবৃত্তঃ (সুরেন্দ্রনাথ নরেন্দ্রের সঙ্গে ফিরে এলেন)।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

আহা! তরুণ যুবককই তো শিক্ষা দেওয়ার যোগ্য। যেহেতু তার হৃদয় কোমল, সেহেতু সবকিছুই তার হৃদয়ে গাঁথা হয়ে যায়। আমি জটাজুটধারী, সকলভারবাহী, মন্দাকিনীর কলকলধারাধারী, জগতের মঙ্গলকারী শিবকে আমার উত্তরসাধকরূপে দেখতে চাই। (সুরেন্দ্রনাথ নরেন্দ্রনাথকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলেন।)


ভারতবিবেকম্ (অষ্টম অংশ)

মূলপাঠঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ-

(প্রবিশ্য) সাধবে নমঃ। (শ্রীরামকৃষ্ণস্তং নিপুণং পশ্যতি। নরেন্দ্রশ্চ কিঞ্চিৎ পর্যাকুলো দৃশ্যতে)।

শব্দার্থঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ-

প্রবিশ্য (প্রবেশ করে) সাধবে নমঃ (প্রণাম জানাই)। শ্রীরামকৃষ্ণঃ(শ্রীরামকৃষ্ণ) তম্ (তাকে) নিপুণং (ভালোভাবে) পশ্যতি (দেখতে লাগলেন)। নরেন্দ্রঃ চ (নরেন্দ্রকেও) কিঞ্চিৎ (কিছুটা) পর্যাকুলঃ (উদবিগ্ন) দৃশ্যতে (দেখা গেল)।

বঙ্গানুবাদঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ-

(প্রবেশ করে) সাধুজনকে প্রণাম জানাই। (শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ভালোভাবে দেখতে লাগলেন। নরেন্দ্রনাথকেও কিছুটা বিচলিত দেখা গেল।)

ভারতবিবেকম্ (নবম অংশ)

মূলপাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(স্বগতম) এষ এব স বালকো যদর্থমহং নক্তন্দিবং প্রার্থয়ে। কোমলকুঞ্চিতকেশদাম সুসজ্জশিরস্কাকর্ণ – বিস্ফারিতনয়নোহয়ং দর্শনদানেনৈব মামতুলনং নন্দয়তি। হৃদয়তটিনী মম সগর্জনং প্রবহতিতরাং সাগরসঙ্গমে সাগরজলস্ফীতিপ্রভাবাৎ যথা গঙ্গতোয়ধারা। নটনৃত্যচটুলমিব ভাসতে মম চিত্তস্থলং যত্র মম স্মৃতিগুল্মদলং কম্পতে মলয়পবনস্পর্শাৎ পুলকাকুলং বেণুবনং যথা।

শব্দার্থঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

স্বগতম্ (মনে মনে) এষঃ এব (এই) সঃ বালকঃ (সেই বালক) যদর্থম্ (যার জন্য) অহম্ (আমি) নক্তন্দিবম্ (দিনরাত) প্রার্থয়ে (প্রার্থনা করছি)। কোমল কুঞ্চিত-কেশদাম (কোমল ও কুঞ্চিত কেশরাশি) সুসজ্জশিরঃ (সুসজ্জিত উল্লীষ ধারী) আকর্ণ-বিস্ফারিতঃ নয়নঃ (কর্ণ পর্যন্ত টানা টানা চক্ষুবিশিষ্ট) অয়ম্ (এই যুবক) দর্শন দানেন – এব (দর্শন দানের দ্বারাই) মাম্ (আমাকে) অতুলনম্ (দারুণভাবে) নন্দয়তি (আনন্দ দিচ্ছে)। হৃদয়তটিনী (হৃদয়রূপনদী) মম (আমার) সগর্জনম্ (গর্জন করতে করতে) প্রবহতিতরাম্ (অধিকবেগে প্রবাহিত হচ্ছে) সাগর-সঙ্গমে (সাগরের সঙ্গে মিলিত হতে) সাগর-জল-স্ফীতি-প্রভাবাৎ (সাগরের জলস্ফীতি হওয়ায়) যথা (যেরূপ) গঙ্গাতোয়-ধারা (গঙ্গার বারিধারা)। নট-নৃত্যচটুলম্ ইব (নর্তকের নৃত্যের মনোরম ভঙ্গিমার ন্যায়) ভাসতে (উদ্ভাসিত হচ্ছে) মম (আমার) চিত্তস্থলম্ (হৃদয়) যত্র (যেখানে) মম (আমার) স্মৃতি-গুল্ম-দলম্ (স্মৃতিরূপ লতাগুলি) কম্পতে (কম্পিত হচ্ছে) মলয়-পবন-স্পর্শাৎ-পুলকাকুলম্ (স্নিগ্ধ দক্ষিণবায়ুর স্পর্শে আনন্দে আকুল) বেণুবনম্ (বেণুবন) যথা (যেরূপ)।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(মনে মনে) এই সেই বালক যার জন্য আমি দিনরাত প্রার্থনা করি। কোমল অথচ কুঞ্চিত কেশ রাশি, সুসজ্জিত শিরস্ত্রাণধারী আকর্ণবিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট এই বালক দর্শনদানের দ্বারা আমাকে অসীম আনন্দ দিচ্ছে। আমার হৃদয়রূপ নদী গর্জন করতে করতে সাগরসঙ্গমে (এই বালকের সঙ্গে মিশতে) দ্রুততর গতিতে ছুটছে, যেমন সাগরের জলস্ফীতিহেতু গঙ্গার জলধারা দ্রুততর গতিতে সাগরসঙ্গমে চলে। নর্তকের নৃত্যের মনোরম নৃত্যভঙ্গিমার ন্যায় আমায় হৃদয় উদ্ভাসিত হচ্ছে যেখানে আমার স্মৃতিরূপ লতাগুলি কম্পিত হচ্ছে (ঠিক যেমন) স্নিগ্ধ দক্ষিণবায়ুর স্পর্শে আকুল হয়ে বেণুবন আন্দোলিত হয়।

ভারতবিবেকম্ (দশম অংশ)

মূলপাঠঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ-

(স্বগতম) অহো ! কথমহং নাত্মানং প্রশময়িতুং সমর্থোঽস্মি! নাহং স্বীকরোমি স্বীকরিষ্যামি বা তথাপি হৃদয় মে এষ এব হৃদয়ানন্দশ্চন্দ্রো যস্যানন্দরশ্মীংশ্চকোর ইবাহং পিবামি। কোহসৌ মহানুভাবঃ কোটিসূর্যসম প্রভঃ, অথচ কোটিচন্দ্রসুশীতলো রাজতে ধরাতলে ? অথবা ক্ষণিকঃ, ক্ষণিক এর মে চিত্তবিকারঃ ? মানবশরীরে ভাগবতসত্তারোপং নাহং কদাপি স্বীকরিষ্যামি। ধিঙ্ মম বিদ্যাং যদিখমপপ্রলাপমিবাহং কৃতবান, ধিঙ্ মাম্।

শব্দার্থঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ-

স্বগতম্ (মনে মনে) অহো ! (একি) কথম্ (কেন) অহম্ (আমি) ন (না) আত্মানম্ (নিজেকে) প্রশময়িতুম্ (সংযত করতে) সমর্থঃ (সক্ষম) অস্মি (হচ্ছি)। ন (না) অহম্ (আমি) স্বীকরোমি (স্বীকার করি) স্বীকরিষ্যামি (স্বীকার করব) বা (অথবা) তথাপি (তবুও) হৃদয়ম্ (হৃদয়) মে (আমার) এষঃ এব (ইনিই) হৃদয়ানন্দশ্চন্দ্রঃ (হৃদয়ের আনন্দবর্ধক চন্দ্ৰ) যস্য (যাঁর) আনন্দরশ্মীন্ (আনন্দরূপ রশ্মি) চকোরঃ ইব (চকোরের মতো) অহম্ (আমি) পিবামি (পান করছি) কঃ (কে) অসৌ (ইনি) মহানুভাবঃ (মহানুভব) কোটি সূর্য-সম-প্রভঃ (কোটি সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান) অথচ (আবার) কোটিচন্দ্র-সুশীতলঃ (কোটি চন্দ্রের ন্যায় শীতল) রাজতে (বিরাজ করছেন) ধরাতলে (পৃথিবীতে)? অথবা (অথবা) ক্ষণিকঃ (ক্ষণিক) ক্ষণিকঃ (ক্ষণিকের) এব (জন্য) মে (আমার) চিত্তবিকারঃ (চিত্তচাঞ্চল্য)? মানবশরীরে (মানুষের দেহে) ভাগবতসত্তারোপম্ (ভগবৎসত্তার আরোপ) ন (না) অহম্ (আমি) কদাপি (কখনও) স্বীকরিষ্যামি (স্বীকার করব)। ধিক্ (ধিক) মম (আমার) বিদ্যাম্ (বিদ্যাকে) যদ্ (যেহেতু) ইত্থম্ (এরূপ) অপপ্রলাপম্ ইব (অপপ্রলাপের মতো) কৃতবান্ (যা তা ভাবছি), ধিক্ (ধিক্) মাম্‌ (আমাকে)।

বঙ্গানুবাদঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ-

(মনে মনে) এ কী! কেন আমি নিজেকে সংযত করতে পারছি না! আমি স্বীকার করি না বা স্বীকার করব না। তথাপি আমার মন (যেন বলে দিচ্ছে) ইনিই আমার চন্দ্র, যাঁর আনন্দরশ্মি আমি যেন চকোরের মতো পান করছি। কে এই মহানুভব কোটি সূর্যের ন্যায় প্রভাবিশিষ্ট আবার কোটি চন্দ্রের ন্যায় সুশীতল (রূপ ধরে) পৃথিবীতে বিরাজ করছেন? অথবা ক্ষণিক, ক্ষণিকের আমার এই চিত্তচাঞ্চল্য। মানবশরীরে ভগবৎসত্তার আরোপ আমি কখনোই স্বীকার করব না। আমার বিদ্যাকে ধিক্। যেহেতু আমি অপপ্রলাপের মতো যা তা মনে করছি—আমাকেও ধিক্।

ভারতবিবেকম্ (একাদশ অংশ)

মূল পাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

(স্বগতম্) নিবারিতা মম দীর্ঘপিপাসা শ্রেষ্ঠভক্তসন্তানবদনকমলনিরীক্ষণেন, এষ এর মম সর্বশুভঙ্করসদাশিব আকর্ণবিস্তৃতন য়নেন্দীবরো ভুজযুগনিন্দিত-করিকর-যুগধারী ব্যুঢ়োরস্কঃ সদাশিব অধুনা সুরেন্দ্রণ সহ সমায়াতঃ। অহো! আনন্দবিহ্বলঃ কিমহং করিষ্যামি ! (আনন্দেন নৃত্যতি)

শব্দার্থ:-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ

স্বগতম্ (মনে মনে) নিবারিতা (দূরীভত হল) মম (আমার) দীর্ঘ-পিপাসা (দীর্ঘদিনের তৃয়া) শ্রেষ্ঠ-ভক্ত-সন্তান-বদন-কমল-নিরীক্ষণেন (শ্রেঠ ভক্ত সন্তানের মুখপদ্ম দর্শনের দ্বারা) এষঃ এব (এই-ই) মম (আমার) সর্বশুভঙ্করঃ সদাশিবঃ (সকল মঙ্গলবিধানকারী সদাশিব) আকর্ণ-বিস্তৃতনয়ন-ইন্দীবরঃ (কর্ণ পর্যন্ত বিস্তৃত ইন্দীবরতুল্য নয়নবিশিষ্ট) ভুজযুগ-নিন্দিত-করিকরযুগধারী (হাতির দুখানি শুঁড়কেও নিন্দা করে এমন দুটি বাহুধারী) ব্যুঢ়োরস্কঃ (বিশাল বক্ষবিশিষ্ট) সদাশিবঃ (সদাশিব) অধুনা (এখন) সুরেন্ত্রেণ সহ (সুরেন্দ্রের সঙ্গে) সমায়াতঃ (এসেছে)। অহো। (আহা) আনন্দ-বিহ্বলঃ (আনন্দে বিহ্বল হয়ে) কিম্ (কি) অহম (আমি) করিষ্যামি (করি) ! আনন্দেন নৃত্যতি (আনন্দে নৃত্য করতে লাগলেন)।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ –

(মনে মনে) শ্রেষ্ঠ ভক্তসন্তানের মুখপদ্ম দর্শন করে আমার দীর্ঘদিনের পিপাসা দূর হল। এই ই আমার সর্বমঙ্গলকারী সদাশিব (যার) কর্ণ পর্যন্ত বিস্তৃত ইন্দীবরতুল্য দুখানি চোখ, বাহু দুটি যেন হস্তীর দুটি শুঁড়কে নিন্দিত করে, বিশাল বক্ষ। সেই সদাশিব এখন সুরেন্দ্রের সঙ্গে এসেছে। আহা! আনন্দে বিহ্বল হয়ে আমি এখন কী করি! (আনন্দে নৃত্য করতে লাগলেন)।

ভারতবিবেকম্ (দ্বাদশ অংশ)

মূলপাঠঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ

(স্বগতম) কথমুন্মত্ত ইব নরীনৃত্যমান এষ জনো মম হৃদয়ং পর্যাকুলয়তি। অথবৈষ মম চিত্তস্য ভ্রমঃ।

শব্দার্থঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ

স্বগতম্ (মনে মনে) কথম্ (এ কী!) উন্মত্তঃ ইব (উন্মত্তের মতো) নরীনৃত্যমানঃ (বারংবার নাচতে নাচতে) এষঃ জনঃ (এই ব্যক্তি) মম (আমার) হৃদয়ম্ (হৃদয়কে) পর্যাকুলয়তি (পর্যাকুল করছেন)। অথবা (অথবা) এষঃ (এটি) মম (আমার) চিত্তস্য (মনের) ভ্রমঃ (ভ্রান্তি)।

বঙ্গানুবাদঃ-

নরেন্দ্রনাথঃ

(মনে মনে) এ কী উন্মত্তের মতো বারবার নাচতে নাচতে এই ব্যক্তি আমার হৃদয়কে পর্যাকুল করে তুলছেন কেন? অথবা এটি আমার মনের ভ্রান্তি।

ভারতবিবেকম্ (ত্রয়োদশ অংশ)

মূলপাঠঃ-

সুরেন্দ্রঃ

ভগবন্ ! ব্যামোহ ইব মম সমুপজাতো যদহমেনং নরেন্দ্রং পিতৃপরিচয়াদিক্রমেণ ভবৎসকাশে নাসাদিতবান্ ।

শব্দার্থঃ-

সুরেন্দ্রঃ

ভগবন্ (প্রভু) ব্যামোহঃ (ভ্রান্তি) ইব (যেন) মম (আমার) সমুপজাতঃ (উপস্থিত হয়েছিল) যদ্(যেহেতু) অহম্ (আমি) এনম্ (এই) নরেন্দ্রম্ (নরেন্দ্রকে) পিতৃপরিচয়াদিক্রমেণ (পিতৃপরিচয়াদি দিয়ে) ভবৎসকাশে (আপনার কাছে) ন আসাদিতম্ (উপস্থাপিত করিনি)।

বঙ্গানুবাদঃ-

সুরেন্দ্রঃ

প্রভু! আমার কাছে এটি মোহ বলে মনে হচ্ছে। আমি এই নরেন্দ্রকে পিতৃপরিচয়াদি দিয়ে (আপনার কাছে) উপস্থাপিত করিনি (অর্থাৎ পিতৃপরিচয়াদি দিইনি)।

ভারতবিবেকম্ (চতুর্দশ অংশ)

মূলপাঠঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ

সুরেন্দ্র ! এষ মম জন্মজন্মান্তরপরিচিতো জনঃ, কথং তদ্দত্তপরিচয়াপেক্ষী ভবেয়ম্ ? অথবা নায়মুদ্বেগকারণম্ । (নরেন্দ্রমুদ্দিশ্য) নরেন্দ্র ! ত্বম্মুখাম্মাতৃনাম ভৃশং শ্রোতুকামোঽস্মি । সঙ্গীতেন মম কুরু চিত্তবিনোদনম্ ।

শব্দার্থঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণঃ-

সুরেন্দ্র (সুরেন্দ্র) ! এষঃ (এ) মম (আমার) জন্মজন্মান্তর-পরিচিতঃ (জন্মজন্মান্তরের পরিচিত) জনঃ (ব্যক্তি) কথম্ (কেন) তদত্তদ পরিচয়াপেক্ষী (তার সম্বন্ধে পরিচয়ের অপেক্ষায়) ভবেয়ম্ (থাকব) ? অথবা (অথবা) ন অয়ম্ (এটি নয়) উদ্বেগকারণম্ (উদ্বেগের কারণ) । নরেন্দ্রম্ উদ্দিশ্য (নরেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে) নরেন্দ্র! (নরেন্দ্র) ত্বৎমুখাৎ (তোমার মুখ থেকে) মাতৃনাম (মায়ের নাম—অর্থাৎ শ্যামাসংগীত) ভূশম্ (অত্যন্ত) শ্রোতুকামঃ (শুনতে ইচ্ছুক) অস্মি (হয়েছি) । সঙ্গীতেন (সংগীতের দ্বারা) মম (আমার) কুরু (করো) চিত্ত-বিনোদনম্ (চিত্তবিনোদন) ।

বঙ্গানুবাদঃ-

শ্রীরামকৃষ্ণ

সুরেন্দ্র! এ আমার জন্মজন্মান্তরের পরিচিত ব্যক্তি । আমি কেন তোমার পরিচয়াপেক্ষী হব ? অথবা এটি উদ্বেগের কারণ নয় । (নরেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে) নরেন্দ্র ! তোমার মুখ থেকে মাতৃনাম শুনতে আমি অত্যন্ত উৎসুক । সংগীতের দ্বারা (তুমি) আমার চিত্তবিনোদন করো ।

ভারতবিবেকম্ নাট্যাংশ সংস্কৃত পাঠ

Leave a Comment